ভাগবত গীতার মধ্যে আঠারোটা আধ্যায় আছে, যার প্রত্যেক আধ্যায়ে বেদ ও উপনিশদ এর সারসংক্ষেপ রয়েছে, এবং গীতা মাহাত্ম্য হল শ্রীমদ্ভগবত গীতার সারসংক্ষেপ। গীতা পাঠ করলে কী বিশেষ ফল পাওয়া যায় তা ব্যাখ্যা করা আছে গীতা মাহাত্ম্য-এ।
শ্রীশঙ্করাচার্য প্রণীত গীতা-মাহাত্ম্য
বিষ্ণোঃ পদমবাপ্নোতি ভয়শোকাদিবর্জিতঃ।।১।।
শ্রীমদ্ভগবত গীতার নির্দেশকে যথাযথভাবে অনুসরণ করতে পারলে, অতি সহজেই সমস্ত ভয় ও উদ্বেগ থেকে মুক্ত হওয়া যায়। এই জীবনে ভয় ও শোকাদি বর্জিত হয়ে পরবর্তী জীবনে চিন্ময় স্বরূপ অর্জন করা যায়।
নৈব সন্তি হি পাপানি পূ্র্বজন্মকৃতানি চ।।২।।
কেউ যদি আন্তরিকভাবে এবং অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে ভগবদগীতা পাঠ করে, তা হলে ভগবানের করুণায় তার অতীতের সমস্ত পাপকর্মের ফল থেকে সে মুক্ত হয়।
সকৃদ্ গীতামৃতস্নানং সংসারমলনাশনম্।।৩।।
প্রতিদিন জলে স্নান করে মানুষ নিজেকে পরিচ্ছন্ন করতেই পারে, কিন্তু কেউ যদি ভগবদগীতার গঙ্গাজলে একটি বারও স্নান করে, তা হলে জড় জীবনের মলিনতা একেবারেই বিনষ্ট হয়ে যায়।
যা স্বয়ং পদ্মনাভস্য মুখপদ্মাদ্ বিনিঃসৃতা।।৪।।
যেহেতু ভগবদগীতার বাণী স্বয়ং পরম পুরুষোত্তম ভগবানের মুখনিঃসৃত বাণী, তাই এই গ্রন্থ পাঠ করলে আর অন্যকোন বৈদিক সাহিত্য পড়বার দরকার হয় না। গভীর নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার সঙ্গে নিয়মিতভাবে ভগবদগীতা শ্রবণ ও কীর্তন করলে আমাদের অন্তর্নিহিত ভগবদ্ভক্তির স্বাভাবিক বিকাশ হয়।
বর্তমান জগতে মানুষেরা নানা রকম কাজে এতই ব্যস্ত থাকে যে, তাদের পক্ষে সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পাঠ করা সম্ভব নয়। সমস্ত বৈদিক সাহিত্য পড়বার প্রয়োজনও নেই। এই একটি গ্রন্থ ভগবদগীতা পাঠ করলেই মানুষ সমস্ত বৈদিক জ্ঞানের সারমর্ম উপলব্ধি করতে পারবে, কারণ ভগবদগীতা হচ্ছে বেদের সার এবং এই গীতা স্বয়ং ভগবানের মুখনিঃসৃত উপদেশ বাণী।
গীতাগঙ্গোদকং পীত্বা পুনর্জন্ম ন বিদ্যতে।।৫।।
গঙ্গাজল পান করলে অবধারিতভাবে মুক্তি পাওয়া যায়, আর যিনি ভগবদগীতার পুণ্য পীযুষ পান করেছেন, তাঁর কথা আর কি বলবার আছে? ভগবদগীতা হচ্ছে মহাভারতের অমৃতরস, যা আদি বিষ্ণু ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নিজেই বলে গেছেন। (গীতা- ভগবানের চরণপদ্ম থেকে উদ্ভুত বলে উল্লেখ করা হয়েছে। ভগবানের মুখ ও পায়ের মধ্যে অবশ্য কোন পার্থক্য নেই। তবে আমাদের এটি বুঝতে অসুবিধা হয় না যে, ভগবদগীতার গুরুত্ব গঙ্গার চেয়েও বেশি।)
পার্থো বৎসঃ সুধীর্ভোক্তা দুগ্ধং গীতামৃতং মহৎ।।৬।।
এই গীতোপনিষদ্ ভগবদগীতা সমস্ত উপনিষদের সারাতিসার এবং তা ঠিক একটি গাভীর মতো এবং রাখাল বালকরূপে প্রসিদ্ধ ভগবান শ্রীকৃ্ষই এই গাভীকে দোহন করেছেন। অর্জুন যেন গোবৎসের মতো এবং জ্ঞানীগুণী ও শুদ্ধ ভক্তেরাই ভগবদগীতার সেই অমৃতময় দুগ্ধ পান করে থাকেন।
একো দেবো দেবকীপুত্র এব।
একো মন্ত্রস্য নামানি যানি
কর্মাপ্যেকং তস্য দেবস্য সেবা।।৭।।
বর্তমান জগতে মানুষ আকুলভাবে আকাঙ্ক্ষা করছে একটি শাস্ত্রের, একক ভগবানের, একটি ধর্মের এবং একটি বৃত্তির। তাই, "একং শাস্ত্রং দেবকীপুত্রগীতম্"- সারা পৃথীবীর মানুষের জন্য সেই একক শাস্ত্র হোক ভগবদগীতা। একো মন্ত্রস্তস্য নামানি-একক মন্ত্র, একক প্রার্থনা, একক স্তোত্র হোক তাঁর নাম কীর্তন।
হরে কৃষ্ণ হরে কৃষ্ণ কৃষ্ণ কৃষ্ণ হরে হরে।
হরে রাম হরে রাম রাম রাম হরে হরে।।
আজ আপনারা জানলেন গীতার মাহাত্ম্য এর শ্লোক এবং ও তার অনুবাদ। ভালো লাগলো শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।