আজ আমার কথা বলতে চলেছি কেরালাস্বীত বিষ্ণু মন্দিরের যা পদ্মানাভাস্বামী মন্দির নামে পরিচিত এবং যেটা গোটা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি অর্থবান ধার্মিক স্থান রূপে উঠে এসেছে।
এবং আমরা জানবো এই মন্দিরের রহস্য সম্পর্কে।
আমরা এখানে মন্দিরের গৌরবময় ইতিহাস, স্থাপত্য, এবং অকল্পনীয় সম্পদের সাথে সাথে বিতর্ক ও উত্তর অধিকার সম্পর্কে জানব।
সূচিপত্র
ঐতিহাসিক পটভূমি :
তবে তো আজকের ভব্য পদ্মানাভাস্বামী মন্দির অষ্টাদশ শতাব্দীতে ত্রাভেনকোর প্রদেশের মহারাজা মারঠান্ড বর্মা সংস্করণ করে বানিয়ে ছিলেন।
কিন্তু এই মন্দিরের ইতিহাস বহু পুরনো যেখানে কিছু ইতিহাসবিদ এই মন্দিরে থাকা মূর্তির ব্যাখ্যা নবম শতাব্দীর তামিল গান "নামালভার" তে বলেন, আবার অনন্য ইতিহাসবিদরা দ্বাদশ শতাব্দীর সংঘমযুগে লেখা শিলাপদ্ধিকরম্ এও এর উৎপত্তি লক্ষ করেন।
স্থানীয় কিংবদন্তিদের অনুসারে মন্দির স্থাপনের কাহিনী সাধু ভেলবামঙ্গলম স্বামীর সঙ্গে জড়িত, যিনি এক জন মহান সাধু ছিলেন, যাকে মালাবারের বেশিরভাগ মন্দির স্থাপনের জন্য জানা যায়।
উনি প্রত্যেক দিন সালিগাম পাথর এর পূজা করেতেন এবং ভগবান বিষ্ণুর বিরাট রূপ দর্শন করার জন্য চোখবন্ধ করে ধান করতেন।
কিন্তু প্রত্যেক দিন ধ্যান করার সময় একটা শিশু উনাকে বিরক্ত করত, এক দিন রেগে গিয়ে উনি ওই শিশুর হাত ধরে নেন কিন্তু চোখ খোলার আগেই শিশুটা বললো যে সে ভগবান বিষ্ণু এবং যদি উনাকে তাঁর বিরাট রূপ দেখতে চান তবে অন্তত কারু জঙ্গলের দিকে এসে যায়।
উনি এর আগে এই জঙ্গলের কথা কখনও শোনেনি। এরজন্য উনি ওই শিশুর অলঙ্কার এর শব্দ দিকে যেতে থাকেন।
রাস্তায় উনি এক কাঁদতে থাকা শিশুকে দেখতে পান, যার মা তাকে চুপ করানোর জন্য অনন্ত কারু জঙ্গলে ছেড়ে আসার কথা বলেছিলো। ঋষিমুনি ওই মহিলার কাছ থেকে জঙ্গলের রাস্তা জেনে নেন এবং প্রচুর পরিশ্রম এর পর তিনি এক মুহূয়া গাছের কাছে পৌঁছে যান।
সেখানে পৌঁছে তার আশ্চর্য এর ঠিকানা থাকে না, উনার সামনে মুহূয়া গাছ হঠাত পরে যায় এবং উনাকে ভগবান বিষ্ণু নাগ দের রাজা অনন্ত নাগ এর উপর শুয়ে থাকা অবস্থায় দেখতে পান, ঋষি ভগবান বিষ্ণুর বিশাল রূপ দর্শন এর পর তাকে ছোট্ট হবার পার্থনা করেন, যাতে উনি তার পুজো করতে পারেন। ভগবান উনার কথা শুনে নেন।
যখন এই দর্শন এর কথা মহারাজের কানে যায় তো তিনি সেখান একটি মন্দির বানানোর আদেশ দেন। এবং এটা মনে করা হয় আজকের পদ্মানাভাস্বামী ভগবান এর মূর্তির ভেতরের অংশ ওই মুহূয়া গাছের অংশ দিয়ে বানানো। পরে মহারাজ এই মন্দির কেই সংস্কার করেন।
ভৌগোলিক অবস্থান :
পদ্মানাভাস্বামী মন্দির কেরালার রাজধানী তীরুবানান্তপূরম এ অবস্থিত। এখান থেকে আরব সাগরও খুবই কাছাকাছি অবস্থিত।
মন্দিরের স্থাপত্যশিল্প :
এই মন্দিরের স্থাপত্য অনেক লোভোনিও। পদ্মানাভাস্বামী মন্দির সেই কিছু মালিআলী মন্দিরের মধ্যে পরে যাতে তামিল দ্রাবিড় স্থাপত্য এবং স্থানীয় কেরল স্থাপত্য এর আলাদাই কাজ দেখা যায়।
মন্দিরের গর্ব গৃহে থাকা বিষ্ণুর প্রতিমাও বাকি জায়গার থেকে আলাদা, এখনকার গর্ব গৃহকে এমনভাবে বানানো যাতে ভগবান ব্রহ্মা, ভগবান বিষ্ণু এবং ভগবান শিবকে দেখতে পাওয়া যাবে।
মন্দিরের ভেতর ভগবান বিষ্ণু অন্তত নাগ এর উপর শুয়ে থাকতে দেখা যায়। উনার ডান হাত একটা শিব লিঙ্গ এর উপর থাকে এবার উনার নাভি থেকে বেড়ানো এক পদ্মের উপর ভগবান ব্রহ্মা বসে থাকেন। এর জন্যই এই মন্দিরের নাম পদ্ম...নাভি...স্বামী রাখা হয়েছে।
প্রত্নতত্ত্ববিদ এর মতে মন্দিরের অভ্যন্তরীণ অংশ কাঠ দিয়ে তৈরি যাতে প্রচুর সালিগ্রাম পাথর বসানো।
এই মন্দির কে আরও অসাধারণ এর তিন দরজা বানিয়ে দেই। যার প্রথম দরজা দিয়ে শেষ নাগ, ভগবান বিষ্ণু, ও ভগবান শিবকে দেখতে পাওয়া যায়। দ্বিতীয় দরজা দিয়ে ভগবান ব্রহ্মা কে দেখতে পাওয়া যায়। এবং তৃতীয় দরজা দিয়ে ভগবান বিষ্ণুর চরণ দেখতে পাওয়া যায়।
পদ্মানাভাস্বামী মন্দিরের ভগবান বিষ্ণুর প্রতিমা |
বিশ্বের সবচেয়ে বেশি সম্পদময় ধার্মিক স্থান :
পদ্মানাভাস্বামী মন্দির তার লুকিয়ে থাকা ধন-সম্পদ এর জন্য বর্তমানে খুব চর্চায় ছিল। এখানে এখনও পর্যন্ত মোট ছয়টি ভল্ট অর্থ্যাৎ মাটির নীচে থাকা গোপন ঘর আর এর সম্পর্কে জানা গিয়েছে।
যার মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এ খোলা ঘরে থেকে প্রায় এক লক্ষ কোটি টাকার সোনা ও সম্পত্তি পাওয়া গেছে। এই আবিষ্কার এর পরেই পদ্মানাভাস্বামী মন্দির বিশ্বের সবচেয়ে সম্পদময় ধার্মিক স্থান হয়ে গিয়েছে।
সাধারণ ভাষায় যদি পদ্মানাভাস্বামী মন্দিরের ধন-সম্পদকে বিবেচনা করা হয় তবে এর গুরুত্ব এক লক্ষ কোটি টাকার চেয়ে অনেক বেশী হবে।
২০১১ তে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুসারে "সুপ্রিম কোর্ট মনিটর কমিটি" এক এক করে সব দরজা খুলতে থাকে কিন্তু ভল্ট B নিয়ে আজও বিবাদ আছে। মন্দিরের পুরোহিত এবং রাজকীয় পরিবার ওই ঘরকে খোলার বিপরীতে আছেন। উনাদের মতে এই দরজাই সাপ এর আকৃতি আছে তাই এটাকে খোলার অর্থ হচ্ছে ইশ্বরের ক্রোধকে আমন্ত্রণ জানানো।
ভল্ট B এর কাল্পনিক চিত্র |
তীরুবানান্তপূরম এর ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট একটি কমিটির মাধ্যমে মন্দিরের দেখাশোনা করেন এবং রাজকীয় পরিবার মন্দিরের আচার অনুষ্ঠান এর দেখা শোনা করেন।
পদ্মানাভাস্বামী মন্দির শুধু কেরল না গোটা ভারতে বিষ্ণু ভক্তদের কাছে এক গুরুত্বপূর্ণ স্থান। তাই এটা বললে ভুল হবে না যে এটা ইতিহাস তৈরি করা মন্দির নয়, এটা নিজেই একটা ইতিহাস।
আজ আপনারা জানলেন পদ্মনাভস্বামী মন্দির সম্পর্কে। ভালো লাগলো শেয়ার করবেন, ধন্যবাদ।